২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের জুলাই আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছিলেন, তাদের অন্যতম ওয়াসিম আকরাম। চট্টগ্রামের প্রথম এ শহিদের পরিবারের বাস কক্সবাজারের পেকুয়ায়।
গত এক বছরে ওয়াসিম হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম খুব একটা এগোয়নি। বিচারিক কাজের ধীর গতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবার। ছেলে হত্যার দ্রুত বিচার চান ওয়াসিমের বাবা শফিউল আলম। নিজেকে সপে দিয়ে জুলাই আন্দোলন বেগমান করেছিলেন ওয়াসিম, ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সারা দেশে। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার এক নিভৃত গ্রামে জন্ম আর সাধারণ ঘরে বেড়ে ওঠা ওয়াসিম মুহূর্তেই হয়ে উঠেছিলেন দ্রোহের প্রতীক।
ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র এবং কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। গত বছরের ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীতে ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনিই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহিদ। ওয়াসিম এখনও অনেকের কাছে প্রেরণার আগুন। তবে পরিবার আছে তার স্মৃতি নিয়ে। ওয়াসিমের মা জ্যোৎস্না বেগম এখনও বিশ্বাস করতে পারেন না, তার সন্তান আর কখনও বাড়ি ফিরবে না। তার চোখে আজ ১৬ জুলাই শুধুই বিচারের আকুতি। পেকুয়ার মেহেরনামা বাজারপাড়া এলাকার শফিউল আলম ও জ্যোৎস্না বেগম দম্পতির সন্তান ওয়াসিম। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তৃতীয়।
গত বছরের ১৬ জুলাই নগরীর ষোলশহর স্টেশনে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ ছিল। সেখানে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর বাবর, নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে যুবলীগ, ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা অবস্থান নেওয়ায় ছাত্ররা সমাবেশ মুরাদপুর সরিয়ে নেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডাররা নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিতে প্রথমে আহত হন ওয়াসিম আকরাম। একপর্যায়ে কাছে এসে তাকে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা। পরে কয়েকজন সহযোদ্ধা ওয়াসিমকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
ওয়াসিমের বড় ভাই আরশেদ আলী বলেন, ভাইকে এখনও খুঁজে বেড়াই। জানি সে ফিরবে না। আমাদের চাওয়া হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
ওয়াসিম হত্যার ঘটনায় গত বছরের ১৯ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলসহ ১০৮ জনের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন ওয়াসিমের মা। এ মামলায় এখন পর্যন্ত এজহারভুক্ত ও অজ্ঞাত অর্ধশতাধিক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওয়াসিমের বাবার জীবনে নিস্তবদ্ধতা নেমে এসেছে রক্তাক্ত সেই ১৬ জুলাই থেকে। ছেলের মৃত্যুর এক মাস পর দেশে ফিরে আসেন সৌদিপ্রবাসী শফিউল আলম। বছর ঘুরে এলেও বিচার শুরু না হওয়ায় হতাশ তিনি।
সময়ের আলোর এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে শফিউল আলম বলেন, আমার ছেলেকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আসামিদের বেশিরভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরে। বছর শেষ হলেও বিচারের অগ্রগতি দেখলাম না। তিনি ছেলে হত্যার বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।