চট্টগ্রামের পাহাড়তলীসহ দেশের আরও দুই জায়গায় রেলের কোচ (বগি) তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এজন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি কারখানা আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা কেবল বিদেশি ঋণের। তবে কোচ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হলেও পাহাড়তলীর কারখানায় যেসব যন্ত্রাংশ আছে তার অধিকাংশই অকেজো হয়ে গেছে, আবার অনেকগুলোর বয়স ৬০ বছরের কম নয়।
এছাড়া মাত্র ৩৮ শতাংশ জনবল দিয়ে চলছে কারখানাটি। এর মধ্যেও বছরে প্রায় ৪০০ কোচ মেরামত করা হয় এ কারখানায়। তাই কোচ তৈরির করতে যেমন জনবল বাড়াতে হবে, তেমনি কারখানা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজন প্রায় ১৫ একর জমি। এদিকে বর্তমানে কারখানায় ব্রডগেজ কোচ মেরামতের কোনো লোক ও রেললাইন নেই। কারখানা স্থাপন করতে হলে এই বিভাগেও জনবল বাড়াতে হবে।
কোচ তৈরির এ প্রকল্পে পাহাড়তলী ছাড়াও অন্য দুটি কারখানা নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর ও দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে। এ তিন কারখানা আধুনিকায়ন ও কোচ তৈরির উপযোগী করা হলে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমবে। বছরে অন্তত ৫০টি কোচ সংযোগ করা যাবে বলে আশা করছে রেলওয়ে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চলের কোচ ও ওয়াগন মেরামত কারখানাটি ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ৩৫ একর জমির ওপর তৈরি করা হয়। বর্তমানে কারখানায় প্রায় ৩০০ যন্ত্রাংশ রয়েছে, যার অনেকগুলো অকার্যকর বা মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে অনেকগুলো আবার ৬০ বছরের পুরানো।
পাহাড়তলীতে সরকারি মন্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ২২০০। কিন্তু বর্তমান জনবল আছে ৭০৮ জন। এছাড়া অস্থায়ী জনবল (টিএলআর) আছে ১৪০ জন।
বর্তমানে পূর্বাঞ্চলে ১১২৭টি কোচ রয়েছে। বর্তমানে ৫০ শতাংশ কোচের আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে। অথচ যেখানে ট্রেন সংখ্যা বাড়াতে কোচ মেরামত সক্ষমতা বাড়ানো দরকার, সেখানে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে কার্যক্রম।
আরও জানা গেছে, পাহাড়তলীতে মাসে মেরামত হয় প্রায় ৩৫টি কোচ। পাহাড়তলীর কারখানাতে যান্ত্রিক শাখার অধীনে হুইল, পেইন্ট, ক্যারেজ, ঢালাই, কামার, ওয়াগন মেন্টেইন ও বৈদ্যুতিক শাখার অধীনে লাইটিং, এসি, পাওয়ার কার শপসহ মোট ২২ টি উপশপ রয়েছে। সবমিলিয়ে বছরে প্রায় ৪০০ মত কোচ মেরামত করা সম্ভব হয়।
ওয়ার্কশপে কাজ করা বিভিন্ন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোচ তৈরি করার জন্য কারখানা জায়গা সংকুলান হবে না৷ যদি অ্যাসেম্বলি শেড নির্মাণ করতে হয়, তাহলে কারখানার আশপাশের জমিতে করতে হবে। এছাড়া বর্তমানে কারখানায় ব্রডগেজ কোচ মেরামতের কোনো লোক ও রেললাইন নেই। যদি কোচ তৈরির শেড করতে হয়, সেক্ষেত্রে ব্রডগেজ রেললাইন, দক্ষ জনবলসহ আধুনিক যন্ত্র স্থাপন করতে হবে৷
তারা আরও জানান, যদি মাসে অন্তত দুটি করে বছরে ২৪টি কোচ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, এজন্য একটি শেড তৈরি করতে হলে ১০ থেকে ১৫ একর জমি প্রয়োজন। এছাড়া আধুনিক যন্ত্রাংশসহ আরও ৩০০ জনবল দরকার পড়বে
বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (কারখানা) মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া সিটিজি ডেইলি নিউজ ২৪ কে বলেন, ‘রেলের উন্নয়ন করতে হলে কারখানার আধুনিকায়ন জরুরি। বর্তমানে জনবল সংকট ও পুরানো যন্ত্র দিয়ে কারখানা পরিচালিত হচ্ছে। কারখানায় কখনও কোচ তৈরি হয়নি। এজন্য কারখানায় দক্ষ জনবল নেই। কোচ তৈরির জন্য দক্ষ জনবল ও যন্ত্র প্রয়োজন। দেশে কোচ তৈরি করা হলে আমদানি নির্ভরতা বন্ধ হবে।’